১১:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে সহিংসতা, থানা-উপজেলা কার্যালয়ে হামলা

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা থানা, উপজেলা পরিষদ, হাইওয়ে থানা ও পৌরসভায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। এ সময় মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিক আহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সকাল সাড়ে ১১টা থেকে ভাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেন স্থানীয়রা। এ সময় সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকলেও তাদের সক্রিয় প্রতিরোধ দেখা যায়নি। দুপুর ১টার দিকে লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কয়েক হাজার মানুষ যোগ দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

বিক্ষুব্ধরা দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালালে ১০-১২ জন আর্মড পুলিশ সদস্য দৌড়ে পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মসজিদে আশ্রয় নেন। রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়াতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে। পরে স্থানীয় মসজিদ-মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের রক্ষা করেন।

এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা থানায় হামলা চালিয়ে ভেতরে থাকা গাড়ি ভাঙচুর করেন। পুলিশ সদস্যরা ভেতরে আটকা পড়ে যান। একইসঙ্গে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে ভাঙচুর ও মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে হাইওয়ে থানার অফিস ও পৌরসভা কার্যালয়েও হামলা হয়।

এ ঘটনায় মাইটিভির ভাঙ্গা উপজেলা প্রতিনিধি সরোয়ার হোসেন আহত হয়েছেন।

৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদি ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ (সালথা-নগরকান্দা) আসনের সঙ্গে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত দেয়। এরপর থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।

৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয়রা দুই মহাসড়ক (ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল) অবরোধ করলে প্রশাসনের আশ্বাসে তা সাময়িকভাবে তুলে নেয়া হয়। তবে দাবি পূরণ না হওয়ায় টানা কয়েকদিন সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ পালন করা হয়, এতে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষের ভোগান্তি চরমে ওঠে।

শনিবার সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে রবিবার রাতে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক ও আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম.ম. সিদ্দিক মিয়াকে আটক করে ডিবি পুলিশ। একই রাতে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অভিযোগে ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা বলেন, “আমরা বিক্ষুব্ধদের শান্ত করার চেষ্টা করছি। নির্বাচন কমিশনে জানানো হয়েছে। কমিশন দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলেছে। আশা করছি দু’এক দিনের মধ্যে সমাধান হবে।”

Tag :

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

তথ্য সংরক্ষণ করুন

জনপ্রিয়

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব চান ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে সহিংসতা, থানা-উপজেলা কার্যালয়ে হামলা

আপডেট সময়: ০২:৪৯:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা থানা, উপজেলা পরিষদ, হাইওয়ে থানা ও পৌরসভায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। এ সময় মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিক আহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সকাল সাড়ে ১১টা থেকে ভাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেন স্থানীয়রা। এ সময় সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকলেও তাদের সক্রিয় প্রতিরোধ দেখা যায়নি। দুপুর ১টার দিকে লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কয়েক হাজার মানুষ যোগ দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

বিক্ষুব্ধরা দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালালে ১০-১২ জন আর্মড পুলিশ সদস্য দৌড়ে পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মসজিদে আশ্রয় নেন। রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়াতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে। পরে স্থানীয় মসজিদ-মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের রক্ষা করেন।

এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা থানায় হামলা চালিয়ে ভেতরে থাকা গাড়ি ভাঙচুর করেন। পুলিশ সদস্যরা ভেতরে আটকা পড়ে যান। একইসঙ্গে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে ভাঙচুর ও মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে হাইওয়ে থানার অফিস ও পৌরসভা কার্যালয়েও হামলা হয়।

এ ঘটনায় মাইটিভির ভাঙ্গা উপজেলা প্রতিনিধি সরোয়ার হোসেন আহত হয়েছেন।

৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদি ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ (সালথা-নগরকান্দা) আসনের সঙ্গে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত দেয়। এরপর থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।

৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয়রা দুই মহাসড়ক (ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল) অবরোধ করলে প্রশাসনের আশ্বাসে তা সাময়িকভাবে তুলে নেয়া হয়। তবে দাবি পূরণ না হওয়ায় টানা কয়েকদিন সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ পালন করা হয়, এতে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষের ভোগান্তি চরমে ওঠে।

শনিবার সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে রবিবার রাতে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক ও আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম.ম. সিদ্দিক মিয়াকে আটক করে ডিবি পুলিশ। একই রাতে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অভিযোগে ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা বলেন, “আমরা বিক্ষুব্ধদের শান্ত করার চেষ্টা করছি। নির্বাচন কমিশনে জানানো হয়েছে। কমিশন দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলেছে। আশা করছি দু’এক দিনের মধ্যে সমাধান হবে।”