
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
প্রশাসনের শৈথিল্যে রক্তে রাঙা নগরী” বেপরোয়া গতিতে মৃত্যু, দায় কার?”-
জনরোষে ফুঁসে উঠছে নগরবাসী,,চট্টগ্রাম নগরীতে আবারও সড়কে রক্ত ঝরল! একদিনে তিন থানা এলাকায় পৃথক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন চারজন—দুই তরুণ, এক ড্রাইভার ও এক নারী গার্মেন্টস শ্রমিক। পতেঙ্গা, ইপিজেড ও হালিশহর থানার রাস্তাগুলো পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। পুলিশের তৎপরতা প্রশ্নবিদ্ধ, জনমনে ক্ষোভের ঝড়।
ইপিজেড থানাধীন আকমল আলী লিংক রোডে বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন পথচারী মোঃ শাহজাহান (৪৮)। স্থানীয়রা জানান, কিনারায় হেঁটে যাওয়ার সময় পিছন দিক থেকে ছুটে আসা দ্রুতগতির বাইক সরাসরি ধাক্কা মারে তাকে। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
নিহত শাহজাহান পেশায় একজন ড্রাইভার, বাড়ি ইপিজেড থানার কাজী গলি এলাকায়। ঘাতকরা দুর্ঘটনার পর মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়। পুলিশ বাইকটি জব্দ করেছে, তবে অভিযুক্তদের এখনো শনাক্ত করতে পারেনি। ইপিজেড থানার এক কর্মকর্তা বলেন, “ঘটনার পর পরই এলাকা থেকে পালিয়ে যায় ঘাতকরা। তাদের শনাক্তে অভিযান চলছে।”
বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হালিশহর থানাধীন ফৌজদারহাট টোল রোডে চিটাগাং ফিলিং স্টেশনের বিপরীতে ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। নিয়ন্ত্রণ হারানো মোটরসাইকেল ছিটকে পড়ে রাস্তায়, ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান দুই তরুণ।
নিহতদের পরিচয়—১/ শাহরিয়ার আজিজ অনিক (২৬), পিতা মোঃ আব্দুর রব, বাড়ি আগ্রাবাদ, স্থায়ী ঠিকানা নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার মিয়াপুর।/২/ মোঃ সোহান (২৬), ঠিকানা বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনি, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম।
হালিশহর থানার ওসি জাকির হোসেন জানান,“মোটরসাইকেলটি অতিরিক্ত গতিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই দুইজন নিহত হন। মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।”স্থানীয়রা বলেন, ওই রাস্তায় প্রায়ই এমন দুর্ঘটনা ঘটে, কিন্তু কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেই।
একই দিনে সকালে (মঙ্গলবার সকাল ৭টা) পতেঙ্গা থানার স্টিল মিলস বাজার মেইন রোডে কভারভ্যানের ধাক্কায় নিহত হন মনি আক্তার (২৫) নামে এক গার্মেন্টস নারী শ্রমিক। তিনি কেইপিজেড এলাকার ভেঞ্চুরী গার্মেন্টসে কাজ করতেন।
তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মনি আক্তার প্রতিদিনের মতো অফিসে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ একটি দ্রুতগামী কভারভ্যান পিছন দিক থেকে ধাক্কা মারে—ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
পতেঙ্গা থানার কর্মকর্তা জানান,“ঘাতক কভারভ্যানটি জব্দ করা হয়েছে। চালক পলাতক, তাকে ধরতে অভিযান চলছে।”চট্টগ্রামের সড়ক এখন মৃত্যুর ফাঁদ — প্রশাসনের নীরবতা প্রশ্নবিদ্ধ,একদিনে চারজনের মৃত্যু শহরের জননিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। বেপরোয়া গতি, ট্রাফিক আইন উপেক্ষা, ও অপর্যাপ্ত সড়ক নিয়ন্ত্রণ—সবকিছু মিলিয়ে চট্টগ্রামের সড়কগুলো পরিণত হচ্ছে ‘মৃত্যুর রাস্তায়’।
নগরবাসীর অভিযোগ—“দুর্ঘটনার পর পুলিশ আসে, তদন্তের কথা বলে; কিন্তু কোনো ঘাতক ধরা পড়ে না। পরদিন আবার রাস্তায় রক্ত ঝরে!”
চট্টগ্রামে একদিনে চার প্রাণহানি—এই মৃত্যু শুধুই সংখ্যা নয়, বরং প্রশাসনিক ব্যর্থতার এক ভয়াল প্রতিচ্ছবি। সড়কে নিয়ন্ত্রণ ফেরাতে এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে, নগরবাসীকে আরও রক্ত ঝরতে দেখতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।