জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার আগে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট ধরে রায়ের সারাংশ পাঠ করেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। আদালতে প্রসিকিউশন পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অন্যান্য প্রসিকিউটররা। পলাতক আসামিদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন ও মামলার পটভূমি
জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম মামলাটি ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা এই বিবিধ মামলা।
এই মামলাতেই প্রথমবারের মতো কোনো আসামি ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হন। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার বিবরণ দিতে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং সেদিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর ১২ মে তদন্ত সংস্থা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে এবং ১ জুন প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র জমা দেয়।
আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগসমূহ
প্রসিকিউশনের আনীত পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল—
১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান
আন্দোলনকারীদের দমন করতে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা
ঢাকার চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা
আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা
অভিযোগপত্রে শেখ হাসিনাকে “মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।