১১:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৪ মে ২০২৫

ছিদামে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে হিযবুত তাওহীদের সংঘর্ষে ছয় বাড়িতে আগুন

জুবেল আরেফিন,রংপুর ব্যুরো চিফঃ

রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলায় একটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে হিযবুত তাওহীদের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সংগঠনটির বিভাগীয় সভাপতিসহ ছয় কর্মীর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সোমবার সকালে পীরগাছার পারুল ইউনিয়নের ছিদামবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হিযবুত তাওহীদের রংপুর বিভাগীয় সভাপতি আবদুল কুদ্দুসের অভিযোগ, স্থানীয় জামায়াত নেতাদের নেতৃত্বে তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। তবে জামায়াত নেতারা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয় সাধারণ মানুষের সঙ্গে হিযবুত তাওহীদের সদস্যদের সংঘর্ষ হয়েছে। পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, হিযবুত তাওহীদের একটি কর্মসূচি হওয়ার কথা মঙ্গলবার। সে উপলক্ষে কিছু লোকজনের খাওয়া- দাওয়ার আয়োজন করেছিল। তখন স্থানীয় লোকজন সেখানে গেলে হিযবুত তাওহীদের লোকজনের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হলে উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা করি। ওসির ভাষ্য মতে দুই পক্ষকে সরিয়ে দিলে তখন আরেকটি পক্ষ আরেক গ্রাম থেকে এসে হিযবুত তাওহীদের লোকজন যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, পেছন থেকে সেই বাড়িতে আক্রমণ করে। এক পর্যায়ে চার-পাঁচটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। উভয় পক্ষের ২৫-৩০ জন আহত হন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। হিযবুত তাওহীদের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি সংগঠনের বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব পান ছিদাম বাজার এলাকার আবদুল কুদ্দুস। এ নিয়ে মঙ্গলবার তিনি বাড়িতে সংগঠনের নেতাদের দাওয়াত দেন। এ উপলক্ষে রোববার সন্ধ্যায় তার বাড়িতে স্থানীয় ডেকোরেটর থেকে মালপত্র নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পারুল ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি নূর আলমের হুমকির কারণে ডেকোরেটরের মালিক জিনিসপত্র ফেরত নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেন আবদুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, তারা বিভিন্ন মাধ্যমে রাতেই জানতে পারেন, সোমবার তার বাড়িতে হামলা হবে। তিনি রাতেই পীরগাছার ওসি ও উপজেলা জামায়াতের নেতাদের বিষয়টি জানান। সোমবার সকাল ১০টার দিকে তৌহিদি জনতার ব্যানারে ৩ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সাবেক সভাপতি আলী আহমেদের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে এসে বাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন আবদুল কুদ্দুস। প্রথম দফায় ছয়টি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। তার ভাষ্য, হিযবুত তাওহীদের আস্তানা, খ্রিষ্টানের আস্তানা, ভেঙে দাও, জ্বালিয়ে দাও স্লোগান দিয়ে তার ও কয়েকজন কর্মীর বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। সেখানে হিযবুত তাওহীদের ১০-১৫ জন কর্মী ছিলেন। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দ্বিতীয় বার সংগঠিত হয়ে এসে হামলা করেন। তবে ওয়ার্ড জামায়াতের সাবেক সভাপতি আলী আহমেদের দাবি, ওরা (হিযবুত তাওহীদ) সন্ত্রাসী। গন্ডগোল করার জন্য সবাই এখানে জড়ো হইছে। লক্ষ লক্ষ জনতা থেকে কে বা কারা অগ্নিসংযোগ করেছে, কেউ জানে না। আমি ওখানে যাইনি। নূর আলমের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা যায়নি। অভিযোগের বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির বজলুর রশীদ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জামায়াতের লোকজনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বরং জামায়াতের লোকজন প্রত্যক্ষভাবে প্রশাসন কে সহযোগিতা করেছে। আগে থেকে কোনো পক্ষই বিষয়টি পুলিশকে জানায়নি দাবি করে রংপুরের পুলিশ সুপার আবু সাইম দাবি করেন, পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। তার আগেই যেটুকু হয়েছে, তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন। পীরগাছা থানার ওসি নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, এ ঘটনায় হিযবুত তাওহীদের সাতজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে হিযবুত তাওহীদ নেতা আবদুল কুদ্দুস দাবি করেন, তারা ভুক্ত ভোগী হলেও পুলিশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছয়জন ও তার বাড়ি থেকে চারজনকে আটক করেছে।

Tag :

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

তথ্য সংরক্ষণ করুন

জনপ্রিয়

ছিদামে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে হিযবুত তাওহীদের সংঘর্ষে ছয় বাড়িতে আগুন

আপডেট সময়: ০৬:৪৭:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

জুবেল আরেফিন,রংপুর ব্যুরো চিফঃ

রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলায় একটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে হিযবুত তাওহীদের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সংগঠনটির বিভাগীয় সভাপতিসহ ছয় কর্মীর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সোমবার সকালে পীরগাছার পারুল ইউনিয়নের ছিদামবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হিযবুত তাওহীদের রংপুর বিভাগীয় সভাপতি আবদুল কুদ্দুসের অভিযোগ, স্থানীয় জামায়াত নেতাদের নেতৃত্বে তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। তবে জামায়াত নেতারা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয় সাধারণ মানুষের সঙ্গে হিযবুত তাওহীদের সদস্যদের সংঘর্ষ হয়েছে। পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, হিযবুত তাওহীদের একটি কর্মসূচি হওয়ার কথা মঙ্গলবার। সে উপলক্ষে কিছু লোকজনের খাওয়া- দাওয়ার আয়োজন করেছিল। তখন স্থানীয় লোকজন সেখানে গেলে হিযবুত তাওহীদের লোকজনের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হলে উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা করি। ওসির ভাষ্য মতে দুই পক্ষকে সরিয়ে দিলে তখন আরেকটি পক্ষ আরেক গ্রাম থেকে এসে হিযবুত তাওহীদের লোকজন যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, পেছন থেকে সেই বাড়িতে আক্রমণ করে। এক পর্যায়ে চার-পাঁচটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। উভয় পক্ষের ২৫-৩০ জন আহত হন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। হিযবুত তাওহীদের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি সংগঠনের বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব পান ছিদাম বাজার এলাকার আবদুল কুদ্দুস। এ নিয়ে মঙ্গলবার তিনি বাড়িতে সংগঠনের নেতাদের দাওয়াত দেন। এ উপলক্ষে রোববার সন্ধ্যায় তার বাড়িতে স্থানীয় ডেকোরেটর থেকে মালপত্র নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পারুল ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি নূর আলমের হুমকির কারণে ডেকোরেটরের মালিক জিনিসপত্র ফেরত নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেন আবদুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, তারা বিভিন্ন মাধ্যমে রাতেই জানতে পারেন, সোমবার তার বাড়িতে হামলা হবে। তিনি রাতেই পীরগাছার ওসি ও উপজেলা জামায়াতের নেতাদের বিষয়টি জানান। সোমবার সকাল ১০টার দিকে তৌহিদি জনতার ব্যানারে ৩ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সাবেক সভাপতি আলী আহমেদের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে এসে বাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন আবদুল কুদ্দুস। প্রথম দফায় ছয়টি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। তার ভাষ্য, হিযবুত তাওহীদের আস্তানা, খ্রিষ্টানের আস্তানা, ভেঙে দাও, জ্বালিয়ে দাও স্লোগান দিয়ে তার ও কয়েকজন কর্মীর বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। সেখানে হিযবুত তাওহীদের ১০-১৫ জন কর্মী ছিলেন। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দ্বিতীয় বার সংগঠিত হয়ে এসে হামলা করেন। তবে ওয়ার্ড জামায়াতের সাবেক সভাপতি আলী আহমেদের দাবি, ওরা (হিযবুত তাওহীদ) সন্ত্রাসী। গন্ডগোল করার জন্য সবাই এখানে জড়ো হইছে। লক্ষ লক্ষ জনতা থেকে কে বা কারা অগ্নিসংযোগ করেছে, কেউ জানে না। আমি ওখানে যাইনি। নূর আলমের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা যায়নি। অভিযোগের বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির বজলুর রশীদ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জামায়াতের লোকজনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বরং জামায়াতের লোকজন প্রত্যক্ষভাবে প্রশাসন কে সহযোগিতা করেছে। আগে থেকে কোনো পক্ষই বিষয়টি পুলিশকে জানায়নি দাবি করে রংপুরের পুলিশ সুপার আবু সাইম দাবি করেন, পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। তার আগেই যেটুকু হয়েছে, তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন। পীরগাছা থানার ওসি নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, এ ঘটনায় হিযবুত তাওহীদের সাতজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে হিযবুত তাওহীদ নেতা আবদুল কুদ্দুস দাবি করেন, তারা ভুক্ত ভোগী হলেও পুলিশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছয়জন ও তার বাড়ি থেকে চারজনকে আটক করেছে।