
খুলনা জেলা প্রতিনিধি:
খুলনা খাদ্য বিভাগে বইতে শুরু করেছে পরিবর্তনের হাওয়া। সদ্য যোগদানকৃত জেলা খাদ্য কর্মকর্তা (ডিসি ফুড) মোহাম্মদ তানভীর হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই মাঠ পর্যায়ে শুরু করেছেন ব্যাপক তৎপরতা ও নজরদারি।
গত ৩১ আগস্ট খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে যোগদানের পর দাপ্তরিক কাজ গুছিয়ে তিনি ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে নগরীর ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) কার্যক্রমের মাঠপর্যায়ের তদারকি শুরু করেন। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিনি নিজেই খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন ওএমএস পয়েন্টে উপস্থিত থেকে কালোবাজারি, দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে সরাসরি ভূমিকা রাখছেন।
মাঠ পরিদর্শনের সময় ডিলারদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেন ডিসি ফুড তানভীর হোসেন। তিনি বলেন,
“সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুফল যেন প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছায়—এটাই আমার প্রধান লক্ষ্য।”
এ লক্ষ্যে তিনি ডিলারদের সময়মতো পণ্য সরবরাহস্থলে উপস্থিত থাকা, মাস্টাররোলে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা, প্রতিদিন অন্তত ৩০০ জন সুবিধাভোগীর তালিকা ও স্বাক্ষর সংরক্ষণ করা এবং দীর্ঘ লাইনে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে বিক্রয় কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেন।
পাশাপাশি মানসম্মত চাল ও আটা সরবরাহ নিশ্চিত করতে খুলনা খাদ্য গুদামের জেনারেল ম্যানেজারকেও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
বর্তমানে খুলনা মহানগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭, ১০, ১২ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে খাদ্য বিভাগ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনা করছে; বাকি ওয়ার্ডগুলোতে কার্যক্রম চলছে ডিলারদের মাধ্যমে। তবে অফিস কর্মকর্তাদের দিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কার্যক্রম পরিচালনা করায় দাপ্তরিক কাজে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য দ্রুত ডিলার নিয়োগের আবেদন করেছেন তিনি।
মাঠ পর্যায়ের তদারকির সময় কিছু ভোক্তার অভিযোগের ভিত্তিতে নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের শেখপাড়ার ওএমএস ডিলার আব্দুস সালাম ঢালীর পরিচালিত প্রতিষ্ঠান মেসার্স ছালাম এন্টারপ্রাইজ-এর বিরুদ্ধে অনিয়ম প্রমাণিত হয়। তারা ৩৯০ কেজি চাল ও ৪৮০ কেজি আটা অসৎ উপায়ে বেশি দামে বিক্রি করেছিল। এজন্য চাল বাবদ ২৩,৪৪৯ টাকা ও আটা বাবদ ৩৫,২৬২ টাকা—মোট ৫৮,৯১১ টাকা জরিমানা আদায় করা হয় এবং ওই ওএমএস পয়েন্টের বিক্রয় কার্যক্রম তিন দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়।
এছাড়া, আটা সরবরাহকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান—আশা ফুড, নাজমুল ফুড ও মোহনা ফুড—এর সরবরাহকৃত আটায় ত্রুটি পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
খুলনা জেলার নয়টি উপজেলায় প্রতিদিন ৩১ টন করে মোট ১৮টি স্থানে দুইটি পয়েন্টে এক টন করে আটা বিক্রি হচ্ছে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে আটা ক্রয় করে উপকৃত হচ্ছেন বলে জানান ডিসি ফুড তানভীর হোসেন।
ডিলারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,
“যদি কোনো সমস্যা বা ত্রুটি মনে হয়, সরাসরি আমাকে জানান। আমি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব। তবে কালোবাজারি বা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সংশ্লিষ্ট ডিলারের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।”
তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই খুলনা খাদ্য বিভাগে নতুন করে শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও উপকারভোগীরা।